Author: সামি আলহায

বাগরামে আমাদের বন্দিদশা ছিল চরম কষ্টকর। এখানে আমাদের ওপর আরোপ করা হয় জঘন্য সব শাস্তি। আমাদের মারতে মারতে বেহুঁশ করে ফেলা হতো। চরম দুর্ব্যবহার করা হতো। সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে অবমাননাকর, অপমানজনক আচরণ করা হতো।

তখনো আমার পকেটে আমার রেডিওটি ছিল। একজন মার্কিন সেনা তল্লাশি করতে এসে আমার পকেটে হাত দেয়। হাতের সাথে রেডিওটির স্পর্শ লাগতেই সে থমকে যায়। তার সারা শরীর যেন বরফ হয়ে যায়।

আমি পাকসেনাকে বলি, “ব্যাপার কি? কেন আমাদেরকে আমেরিকার কাছে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে? “আমরা বাধ্য হচ্ছি” সে উত্তর দেয়।সরকারি নির্দেশ পালনের সে কি ঠুনকো অজুহাত তাদের! বললাম, “আমরা আপনাদের ভুলব না। সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে আমরা অভিযোগ দেব। সেদিন আমরা অধিকার আদায় করে ছাড়বো।”

মহিলাটি দোভাষীকে বলল, লাল বস্তুটিতে তার মেয়ের যুবক স্বামী, পিতা, ভাই এবং ভাইয়ের স্ত্রীর পোড়া লাশের ভষ্ম জমানো আছে। যুদ্ধবিমানের বোমা নিক্ষেপে তাদের গ্রামের প্রায় সবাই মারা যায় শুধু মেয়েটি তার দুই শিশু সন্তান আর মা বেঁচে যায়। সবকিছু হাতছাড়া হয়ে গেছে শুধু আছে এই স্মৃতিটুকু। যা সে সব সময় তার সঙ্গে রাখে।

সে বলেছিল, “সামি, আপনি আফগানদের চেনেন না। যখন তারা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তখন তারা কুকুরের চেয়েও নিকৃষ্ট হয়ে যায়। আমি আপনাকে একটিই পরামর্শ দেব-আপনি কান্দাহার ত্যাগ করুন।”

আমাদেরকে পশুর মতো টেনে হিচঁড়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হতো। হাতে পায়ে শিকল পড়িয়ে লোহার খাচার ভিতর ছুঁড়ে ফেলা হতো। সাধারণ ইটের মেঝেতে আমরা পড়ে থাকতাম। আমেরিকার এই জঘন্য জেলখানার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ধরন সাধারণ মানুষের কল্পনারও অতীত।

গুয়ান্তানামোতে সৈনিকরা নিত্য নতুন খাবার মেন্যুর মতো নির্যাতন স্টাইল নিয়ে হাজির হতো কয়েদীদের সামনে। অফিসাররা অর্ডার দেওয়ার সাথে সাথে সৈনিকরা শুরু করে দিত নির্যাতন।

আমার অনশন ধর্মঘট চলাকালে, প্রায়ই তারা আমাকে ফিডিং টিউব দিয়ে জোর করে খাওয়াত। আমি বমি করে ফেলে দিতাম। আমাকে হেনস্থা করতে সেনারা আমার রুমে পানি দেওয়া বন্ধ করে দেয় যাতে আমি সে বমি, বমিমাখা কাপড় পরিষ্কার করতে না পারি। দীর্ঘদিন আমাকে সে কাপড় পরে থাকতে হয়েছে। দীর্ঘদিন সে বমি, বমিমাখা খাবার আর ফ্রীজের মতো ঠাণ্ডা […]

ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ আর্নল্ড টয়েনবি বলেছেন যে, “মানুষ এমন সৃষ্টি যাকে জয় করা যায় না।” আমি আরো যোগ করে বলব, “হৃদয় যার ঈমানী চেতনায় ভরপুর থাকে সে সবকিছু সইতে পারে, সবকিছু।”

গুয়ান্তানামো আমাদের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছিল বিশেষ করে সেসব মানুষদের যারা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ কাজ, পদে নিয়োজিত ছিল। যাদের সমাজে সম্মান ও অভিজাত পরিচিতি রয়েছে।