প্রায়শই প্রশ্ন শোনা যায়, ভালো লেখক হওয়ার উপায় কী? আমিও ভালো লেখক হতে চাই, গুছিয়ে লেখার নিয়ম কী? বই লেখার নিয়ম কী? কীভাবে লেখক হওয়া যায়? লেখক হওয়ার কলা কৌশল কী কী?
কেউ কি কাউকে জোর করে লেখক বানাতে পারে? অর্থাৎ আপনি ‘লেখালেখি’ সম্পর্কিত একটি বই পড়েই লেখক হয়ে যাবেন? বিষয়টি কি এতই সহজ?
নাহ। কারো এমন ধারণা থাকলে সেটি ভুল ধারণা। পাশাপাশি লেখালেখির কৌশলগুলো না জানলেও আপনি লেখক হয়ে যাবেন এমনটা ভাবাও ভুল।বিখ্যাত রাইটিং কোচ মেলিসা ডোনোভানের ‘লেখালেখির ১০১টি অনুশীলন’, ‘লেখা ভালো করার ১০টি উপায়’ বইদুটোর পোস্টগুলোর নিচে অনেকেই এটা বলে যে, জোর করে লেখালেখি শেখানো যায় না। আমি আপনাদের সাথে একমত। শুধু লেখালেখি না, কাউকে জোর করে যেকোনো কাজ করিয়েই পারফেক্ট রেজাল্ট আশা করা যায় না।
তাই যদি আপনি লেখালেখি করতে চান, অর্থাৎ মানসিকভাবে লেখালেখির জন্য প্রস্তুত হোন তবেই এই বইগুলো আপনাকে উপকৃত করবে। বইগুলো আপনাকে লেখা শুরু করা থেকে বই প্রকাশ পর্যন্ত সকল বিষয়েই গাইড করবে। জানাবে রাইটার্স ব্লক থেকে শুরু করে আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে লেখালেখির মানোন্নয়ন সম্পর্কে যেটা সাধারণত খুব সহজে অন্য কোথাও থেকে জানা সম্ভব হয় না।
এই বইয়ের অনুশীলন ও উপায়গুলো যদি কেউ ঠিকমতো মেনে চলে তবে সার্বিক দিক থেকে তাঁর লেখার মান বেড়ে যাবে। পাশাপাশি লেখালেখির জগত সম্পর্কে এমন কিছু শিখবে যা সারাজীবন কাজে দেবে।
আসুন জানি ভালো লেখক হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে এমন বইদুটো সম্পর্কে
লেখালেখির ১০১টি অনুশীলন
সূচিপত্র
অধ্যায়: ১ ফ্রি-রাইটিং ৯
অধ্যায়: ২ব্যক্তিগত প্রবন্ধ, স্মৃতিচারণ আর জার্নাল রচনার অনুশীলন ১২
২.১ লেখক, নিজেকে জানুন ১২
২.২ একত্রিশ দিনের জার্নাল ১৪
২.৩ লেখাকে আকর্ষণীয় করা ১৭
২.৪ লেখায় অনুভূতির প্রকাশ ১৮
২.৫ আপনার জন্য অপরিহার্য ২০
২.৬ রূপালী আস্তরণ ২১
২.৭ রিপোর্ট করুন ২৩
২.৮ পাঠকের প্রতিক্রিয়া ২৪
২.৯ স্মৃতিকথা ২৬
২.১০ আপনার লেখক পরিচিতি ২৭
অধ্যায়: ৩ মানুষ ও চরিত্র ২৯
৩.১ মানুষেরা শুধুই মানুষ ২৯
৩.২ আমরা একটি পরিবার ৩০
৩.৩ জীবনী ৩১
৩.৪ চরিত্র অঙ্কন ৩৩
৩.৫ খলনায়ক ৩৫
৩.৬ চরিত্রে প্রবেশ করা ৩৫
৩.৭ চরিত্র অধ্যয়ন ৩৭
৩.৮ কিছুই পরম নয় ৩৯
৩.৯ অন্যান্য প্রাণী ৪০
৩.১০ একটি দল নিয়ে লেখা ৪১
অধ্যায়: ৪ কথা, সংলাপ ও স্ক্রিপ্ট ৪৪
৪.১ মৌলিক সংলাপ ৪৪
৪.২ চিত্রনাট্য ৪৫
৪.৩ অঙ্গভঙ্গি ৪৬
৪.৪ ভালোবাসাময় দৃশ্য ৪৮
৪.৫ দুইয়ের অধিক বক্তা ৪৯
৪.৬ সে বলল, তিনি বললেন ৫০
৪.৭ বাণী ৫২
৪.৮ চরিত্রের সাথে চ্যাট করা ৫৩
৪.৯ কথা বলার ধরন ৫৪
৪.১০ মনের কথা, মুখের কথা ৫৬
অধ্যায়: ৫ গঠন ৫৮
৫.১ গল্পের পৃথিবী তৈরি ৫৮
৫.২ ইওরটোপিয়া ৫৯
৫.৩ সেটিং যখন চরিত্র ৬০
৫.৪ সত্যকে ফিকশন করা ৬১
৫.৫ বর্ণনা ৬৩
৫.৬ ফ্যান ফিকশন ৬৪
৫.৭ প্রতীক ৬৬
৫.৮ অবিশ্বাস্য! ৬৮
৫.৯ পটার ওয়ার্স ৬৯
৫.১০ প্রিভিউ ৭১
অধ্যায়: ৬ গল্পকথন ৭৩
৬.১ তিন-অঙ্ক গঠন ৭৩
৬.২ দ্য হিরো’স জার্নি ৭৪
৬.৩ বর্ণনা ও দৃষ্টিকোণ ৭৬
৬.৪ মাঝ থেকে শুরু ৭৭
৬.৫ ডিসকভারি রাইটিং ৭৭
৬.৬ চেকোভের বন্দুক ৮১
৬.৭ না! কাজটা ওর নয়! কখনোই নয়! ৮৩
৬.৮ কনফ্লিক্ট ৮৪
৬.৯ প্লট ৮৬
৬.১০ সহকারী প্লট ৮৭
অধ্যায়: ৭ মূল কাঠামো নিয়ে কাজ ৮৯
৭.১ দ্বিপদী ও চতুষ্পদী শ্লোক ৮৯
৭.২ পাঁচ মাত্রার চরণ ৯০
৭.৩ সনেট ৯১
৭.৪ হাইকু ৯৩
৭.৫ দ্য ডাবল ড্যাকটিল ৯৪
৭.৬ লেখাকে আকৃতি দান: ল্যান্টার্ন ৯৬
৭.৭ ডগরেল (নিকৃষ্ট কবিতা) ৯৭
৭.৮ উদ্ভাবিত কবিতা ৯৯
৭.৯ গুরুগম্ভীর রীতি: রন্ডৌ, রন্ডেল, রন্ডলেট ১০০
৭.১০ কবিতার রীতির আবিষ্কার ১০২
অধ্যায়: ৮ ভাষা ও সাহিত্য ১০৩
৮.১ শব্দভা-ার সমৃদ্ধ করা ১০৩
৮.২ অনুপ্রাস ও স্বরানুপ্রাস ১০৫
৮.৩ তাল ও ছন্দ ১০৭
৮.৪ দেখাবেন, বলবেন না: উপমা ১০৮
৮.৫ কাট-অ্যান্ড-পেস্ট কবিতা ১০৯
৮.৬ রূপক ও উপমা ১১১
৮.৭ সংক্ষিপ্ত লেখা ১১২
৮.৮ ফ্রি-রাইটিং: প্রাথমিক সরঞ্জাম ১১৩
৮.৯ টুইটার কবিতা ১১৫
৮.১০ কবিতায় শব্দ প্রবর্তনা ১১৬
অধ্যায়: ৯ সমস্যার সমাধান এবং সত্যতা ও যুক্তির গুরুত্ব ১১৮
৯.১ সবচেয়ে বড় বিতর্ক ১১৮
৯.২ ফিকশনের তথ্যের সত্যতা ১১৯
৯.৩ সবার একটি নির্দিষ্ট মতামত রয়েছে ১২২
৯.৪ উভয় সঙ্কটে নৈতিকতা ১২৩
৯.৫ ঘটনার শেকল ১২৫
৯.৬ অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ১২৭
৯.৭ যুক্তি ১২৮
৯.৮ সমাধান ১২৯
৯.৯ বৃহৎ থিম, ছোট দৃশ্য ১৩১
৯.১০ রাজনীতি ও ধর্ম ১৩৩
অধ্যায়: ১০ আর্টিকেল ও ব্লগিং ১৩৫
১০.১ শিরোনাম ১৩৫
১০.২ ‘হাউ-টু’ আর্টিকেল ১৩৬
১০.৩ লিস্ট আর্টিকেল ১৩৭
১০.৪ প্রত্যেকেই সমালোচক (বুক রিভিউ) ১৩৮
১০.৫ সমালোচনা (ক্রিটিক্স) ১৪০
১০.৬ সাপ্তাহিক কলাম ১৪০
১০.৭ ব্লগার হতে চান? ১৪২
১০.৮ দ্য অপ-এড ১৪৪
১০.৯ আপনি একজন দক্ষ মানুষ ১৪৫
১০.১০ রিসার্চ ১৪৬
অধ্যায়: ১১ সৃজনশীলতা: আইডিয়া জোগাড় ও অনুপ্রেরণার খোঁজ ১৪৮
১১.১ মানচিত্র ১৪৮
১১.২ নাম ১৪৯
১১.৩ স্বাদের পরীক্ষা ১৫০
১১.৪ আপনার ছুটির দিন ১৫১
১১.৫ আপনার সুপার পাওয়ার কী? ১৫৩
১১.৬ পর্যবেক্ষণ ১৫৪
১১.৭ মিউজিকের গল্প ১৫৫
১১.৮ কোণ ১৫৬
১১.৯ রঙয়ের পৃথিবী ১৫৮
১১.১০ দ্য ইনকিউবেটর ১৫৯
অধ্যায়: ১২ লেখালেখি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া ১৬২
লেখা ভালো করার ১০টি উপায়
সূচিপত্র
১. বই পড়া ৫
২. লেখা ২৩
৩. রিভিশন ৪১
৪. ব্যাকরণ ৫৭
৫. দক্ষতা ৭১
৬. প্রক্রিয়া ৮৭
৭. মন্তব্য ৯৯
৮. সরঞ্জাম ও রিসোর্স ম্যাটরেয়িাল ১১৫
৯. সৃজনশীলতা ও অনুপ্ররেণা ১২৮
১০. সম্প্রদায়, প্রকাশনা শিল্প ও পাঠক ১৪৮
নমুনা পরিচ্ছেদ: চেকোভের বন্দুক
চেকোভের বন্দুক হলো এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে গল্পের কোনো এক জায়গায় একটি উপাদান বর্ণনা করা হয়, কিন্তু এই উপাদানের উদ্দেশ্য কী ছিল, তা বলা হয় আরও অনেক পরে। যেমন: একটি গল্পের শুরুতে বলা হলো, গল্পের মূল চরিত্র নিজের সাথে একটি ছুরি রাখে। গল্পের পরবর্তী কোনো এক পর্যায়ে ভিলেনের হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য এই ছুরির ব্যবহার করে।
এই ছুরির কথা যদি প্রথমে উল্লেখ করা না হতো, তাহলে হঠাৎই এর ব্যবহার বর্ণনা করলে পাঠক আর গল্পটাকে বিশ্বাস করত না।
অন্যদিকে, প্রথমে ছুরির কথা উল্লেখ করে শেষদিকে এর ব্যবহার না দেখালে পাঠক আশাহত হবে। কারণ, ছুরির কথা জানার পরই সবাই একটি ভালো লড়াই উপভোগ করার আশায় বই পড়তে থাকবে।
চেকোভের বন্দুকের উদ্দেশ্য হলো, লেখককে তাদের কর্তব্যের কথা মনে করিয়ে দেওয়া যে, লেখক যেন পাঠককে করা প্রতিজ্ঞাগুলো পূরণ করেন। গল্পের শুরুতে ছুরির বর্ণনা থাকলে প্রতিটি পাঠকই ভেবে বসবে, গল্পের কোনো এক পর্যায়ে নায়ক ছুরিটি ব্যবহার করবে। এটা পাঠকের কাছে লেখকের প্রতীজ্ঞা হয়ে যায়। গল্পে ছুরির ব্যবহার না হলে সে প্রতীজ্ঞার বরখেলাপ হয়ে যাবে। সুতরাং, গল্পে শুধু শুধুই কোনো বিষয় বর্ণনা করা যাবে না। গল্পের প্রতিটি উপাদানের থাকতে হবে একটি উদ্দেশ্য, যা লেখার মান বাড়াতে সাহায্য করবে। চেকোভের বন্দুক লেখককে এই কথাটাই মনে করিয়ে দেয়।
আলেকজান্ডার স্যামেনোভিচ ল্যাযারেভ-কে লেখা অ্যান্টন চেকোভের একটি চিঠি থেকে ‘চেকোভের বন্দুক’ কথাটি আসে। তিনি লিখেছেন, ‘স্টেজের উপর একগাদা রাইফেল রাখার কোনো মানে হয় না, যদি সেগুলো কেউ চালিয়ে দর্শককে না দেখায়!’
অনুশীলন
একটা ছোট দৃশ্য রচনা করুন। শুরুতে দুটি বস্তুর কথা উল্লেখ করুন। মনে রাখবেন, একটি বস্তুর কথা গল্পের পরের অংশে বর্ণনা করতে হবে। বাকি বস্তুটির কথা পরবর্তীতে উল্লেখ করবেন না।
মনে রাখবেন, সকল বস্তুই পরবর্তী বর্ণনার অংশ হয় না। যেমন: একটা রুমের কথা বর্ণনা করার সময় কোণায় পড়ে থাকা চেয়ারের কথা বললে এটি চেকোভের বন্দুক-এর অন্তর্ভুক্ত হবে না। কারণ, সেটিংয়ের বর্ণনার জন্য চেয়ার ব্যবহার করা হয়েছে।
এই অনুশীলনের জন্য এমন বস্তুর কথা উল্লেখ করুন, যা সেটিংয়ের অংশ নয়।
এরপর শুধু একটি বস্তুর উদ্দেশ্য শেষের দিকে উল্লেখ করে গল্পটি লিখুন। পরের দিন নিজেই পাঠক হয়ে গল্পটা পড়ুন। খেয়াল করলে দেখবেন, যে বস্তুটির কথা উল্লেখ করার পর আর ব্যবহার করা হয়নি, তা পাঠকের কাছে কেমন দৃষ্টিকটু লাগছে।
অতঃপর গল্পটা আবার সম্পাদন করুন। হয় বস্তুটি সরিয়ে দিন, নয়তো গল্পের কোনো এক অংশে এর উদ্দেশ্য বর্ণনা করুন।
উপদেশ: কোন উপাদানটি প্রয়োজনীয় আর কোনটি প্রয়োজনীয় নয়, তা নির্ধারণ করা সহজ নয়। অনেকক্ষেত্রে একটি ছুরি এমনভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, পরবর্তীতে যার উল্লেখ করা লাগবে না। যেমন: কেউ একজন খাবার খেতে ছুরির ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে ছুরির উল্লেখ অপ্রয়োজনীয়।
আবার, অন্যকোনো গল্পে শুরুতে বর্ণিত চেয়ারের কথা পরবর্তীতে উল্লেখ করা জরুরি হতে পারে।
আবার, একজন মহিলা নিজের সঙ্গে পার্স রাখলেও এটা প্রয়োজনীয় নয় যে, সে পার্স থেকে কিছু বের করবে। কারণ, নারীরা সবসময়ই নিজেদের সঙ্গে পার্স রাখে। তবে তার হাতে যদি ‘টপ সিক্রেট’ লেখা কোনো ফাইল থাকে, পাঠকেরা অবশ্যই গল্পের কোনো এক অংশে ফাইলের ব্যবহার দেখার আশা করবে।
ব্যতিক্রম: আপনার পূর্বে লিখিত গল্পগুলো পড়ে চিহ্নিত করুন, ঠিক কোন কোন অপ্রয়োজনীয় উপাদান বর্ণনা করেছিলেন, যা গল্পকে দৃষ্টিকটু বানিয়েছে।
উপযোগিতা: গল্পের মান নির্ভর করে বর্ণনার উপর। সেজন্য অপ্রয়োজনীয় উপাদানের উল্লেখ গল্পের বিশ্বাসযোগ্যতা কমিয়ে দিতে পারে। অন্যদিকে এসব উপাদানের পরিহার গল্পকে দেবে ভিন্ন মাত্রা।