Your Cart
কয়েদী ৩৪৫ | গুয়ান্তানামোতে ছয় বছর

সাবেক বন্দি সামি আলহাযের ভাষায় গুয়ান্তানামোর বর্ণনা

গুয়ান্তানামো কিউবার দক্ষিণপূর্ব কোণে অবস্থিত ১১৬.৫৫ বর্গকিলোমিটারের একটি মার্কিন নৌ ঘাটি। কোন কোন সূত্র মতে, আমেরিকা ১৮৯৮ সালে কিউবার হয়ে স্প্যানিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় জায়গাটি দখল করে। স্প্যানিশরা তখন কিউবাকে শাসন করত। অন্য সূত্রগুলোর মতে, কিউবা ১৯০৩ সালে গুয়ান্তানামো জায়গাটি আমেরিকাকে উপহার দেয় স্প্যানিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহযোগিতার নিদর্শন হিসেবে। জায়গাটির বার্ষিক ভাড়া ছিল তখন প্রায় দুই হাজার স্বর্ণ মুদ্রা বা ৪ হাজার ৮৫ ডলার।

কিউবা বিপ্লবের পর, ফিদেল ক্যাস্ত্রো আমেরিকাকে জায়গাটি ছেড়ে দিতে বার বার তাগিদ দেয়। বার্ষিক ভাড়া বাবদ অর্থ ফিরিয়ে নিতে বলে। আমেরিকানরা ক্যাস্ত্রোর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে। আগের চুক্তির উপর অটল থাকে। সেভাবেই দুই দেশ এগিয়ে চলেছে।

মার্কিন প্রশাসন গুয়ান্তানামোকে একটি জঘন্য, গোপন জায়গায় পরিণত করেছে বিশেষ করে সন্ত্রাসী হিসেবে বন্দিদের জন্য। পেন্টাগনের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড বলেন, “আমাদের আইন মতে আমরা সেখানে বন্দিদের সাথে যা ইচ্ছে করতে পারি…যেকোনো দেশের আইনি বৈধতা ছাড়াই।”

প্রেসিডেন্ট বুশ ২০০১ সালের নভেম্বরে ন্যাশনাল সিকিউরিটি প্রেসিডেন্সিয়াল ডিরেক্টিভ বিলে এই আইনি বৈধতা নিশ্চিত করেন। সেখানে আরো ঘোষনা করা হয়, “আল-কায়েদা সন্ত্রাসীরা বিশেষ সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হবে। সে আদালত সাধারণ আদালতের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়।” তিনি আরো নিশ্চিত করেছেন যে, তাদেরকে বেওয়ারিশ বন্দি হিসেবে গণ্য করা হবে কোন যুদ্ধবন্দি হিসেবে নয়। এভাবে তাদেরকে ১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী যুদ্ধবন্দির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। আর এভাবেই মার্কিন আইনে তাদের কারাগারে বন্দিদের নিরাপত্তা অধিকারে নগ্ন হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনকেও দুর্বল করে রাখা হয়েছে।

বন্দিদের শত্রু সেনা গণ্য করার মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্ত আমেরিকানদেরও অবাক করেছে। অবাক করেছে মার্কিন এবং আন্তর্জাতিক আইনে বন্দিদের অবজ্ঞা করার বিষয়টি। কলিন পাওয়েল প্রশাসনকে বলেন যে, “এই বন্দি আইন আমেরিকার শত বছরের নীতিবিরুদ্ধ। এ আইন মার্কিন সেনারা যেসব আন্তর্জাতিক যুদ্ধ আইনের সুবিধা পেয়ে থাকে তার বিপরীত। এর ফলে আমেরিকার প্রতি ইউরোপিয়ান সমর্থন হ্রাস পাবে।” মার্কিন প্রশাসন তার কথায় কর্ণপাত করেননি। আমেরিকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন একক কণ্ঠ।

গুয়ান্তানামোর বাস্তবতা আড়াল করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট মিডিয়ার সামনে বলেছেন, “রাজনৈতিক ব্যাপার হিসেবে, আমেরিকার সেনারা বন্দিদের সাথে মানবিক আচরণ করবে, একই সাথে যথাযথ এবং প্রয়োজন মাফিক সামরিক কৌশলও প্রয়োগ করবে, জেনেভা আইনের প্রতিও শ্রদ্ধা দেখাবে।”

Book: কয়েদী ৩৪৫