Your Cart

চীনে উইঘুর মুসলমান : সংগ্রাম ও নির্যাতনের ইতিহাস

ওঘুজ খানের বংশধরেরা যখন মঙ্গোলিয়ার বিশুষ্ক তৃণভূমি থেকে নেমে এসেছিলেন, তখন তাদের একটি অংশ থেকে যায় মঙ্গোলিয়া থেকে তিব্বতের আগে পাহাড়ি উপত্যকা অঞ্চলে। তারিম নদীর পানি আর দক্ষিণ পশ্চিম থেকে আসা হিমালয়ের সুশীতল বাতাসের স্পর্শ এই অঞ্চলকে যেন তাদের জন্যই প্রস্তুত করে রেখেছিল। হয়ত সেই মাটিতে পা রাখা কাফেলার অগ্রগামী দলটির প্রথম লোকটির মুখ থেকে অজান্তেই বেরিয়ে এসেছিল “ওয়াহ!” সেখানেই বসতি গাড়লেন তারা।

স্রোতস্বিনী তারিমের জলস্রোত বয়ে চলে। ঠিক যেমনিভাবে সময় বয়ে চলে তার আপন গতিতে। হঠাৎ একদিন সেখানে শোনা যায় পশ্চিম থেকে আগত একদল ঘোড়সওয়ারের ঘোড়ার খুরের আওয়াজ। যাঁরা এসেছে এক আদর্শের কথা শোনাতে। যাঁরা এসেছে দুর্বলকে সবলের দাসত্ব থেকে মুক্তি দিতে। যাঁরা এসেছে অত্যাচারিতদের বুকে তুলে নিয়ে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে লড়তে। তাঁদের পরিচয় তাঁরা মুসলিম।

আর এই মহান ঘোড়সওয়ারদের সিপাহসালার ছিলেন এক কিংবদন্তী। ইতিহাস তাঁকে স্মরণ করে কুতাইবা বিন মুসলিম নামে। কুতাইবা বিন মুসলিম! দীর্ঘ একহারা গড়নের এই সেনাপতির নেতৃত্বে মুসলিম সেনারা প্রথমবারের মত পা রাখল বর্তমান চীনের মাটিতে। প্রথমবারের মতো এই বাতাসে ধ্বনিত হল লা-শরীকের আহবান। “আশহাদু আন্ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ…”

নতুন আদর্শের বাণী ছড়িয়ে পড়তে লাগল। অত্যাচারিত মানুষেরা যেন এই মহান বাণীর জন্যই কত যুগ ধরে অপেক্ষা করছিল! ইসলাম গ্রহণ করতে লাগল তাঁরা দলে দলে। নামাজের জামাতে ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল লোকসংখ্যা। কিন্তু কুতাইবার শাহাদাত এতে ছন্দপতন ঘটাল।

সেনাপতির শাহাদাতের পর মুসলিম সৈন্যদলের বেশিরভাগ সেনারাই চলে গেলেন নিজ মাতৃভূমির উদ্দেশ্যে। যাঁরা রয়ে গেলেন আর যাঁরা নতুন ইসলামে শামিল হয়েছেন, তাঁরাই থাকতে লাগলেন সেখানে। তাঁরা সংখ্যায় খুব বেশি না। কিন্তু তাঁরা থাকতে লাগলেন “একতাবদ্ধ” হয়ে। সীসাঢালা প্রাচীরের মতো। যেন তাঁদের এই একতাবদ্ধ অবস্থাকে নির্দেশ করতে লাগল তাঁদের পরিচয়। তাঁরা “উইঘুর”। একতাবদ্ধ এবং ছোট; কিন্তু একদল সাহসী মানুষের খানাত। (খানাত বা খাগানাত একটি তুর্কি উদ্ভূত শব্দ, যা খান শাসিত একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নির্দেশ করে। আধুনিক তুর্কি ভাষায় শব্দটি কাগানলিক বা হানলিক নামে এবং মোঙ্গলীয় ভাষায় খানলিগ নামে ব্যবহৃত হয়।)

এই খানাতের প্রথম ভাঙ্গন শুরু হয় ৭৫৬ সাল থেকে। ৭৫৫ সালে চীনের এক জেনারেল বিদ্রোহ করে বসেন। তার নাম আন লু শান। নিজের অধীনে থাকা অঞ্চলকে স্বাধীন ঘোষণা করে চীনের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকতে অস্বীকৃতি জানালেন। চীনের সম্রাট জানতেন যে এ অঞ্চলে তার সেনাবাহিনী সংখ্যায় বেশি হয়েও সুবিধা করতে পারবে না। কারণ, এখানকার মাটি, পানি, বাতাস সবকিছুই থাকবে আন লু শানের সেনাবাহিনীর পক্ষে।

সম্রাট বন্ধুত্বের প্রস্তাব পাঠালেন উইঘুর খানাতের উদ্দেশ্যে। বৃহত্তর কল্যাণের লক্ষ্যে খানাত গ্রহণ করল সম্রাটের সন্ধি প্রস্তাব। তাঁরা যুদ্ধে যোগদান করলেন আন লু শানের বিরুদ্ধে। আন লু শান পরাজিত হলেন। আর তখনই প্রকাশ পেল সম্রাটের আসল চেহারা। সম্পূর্ণ এলাকার উপরই নিজের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইলেন তিনি। আর তাই নিজের বিশাল সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দিলেন উইঘুর খানাতের বিরুদ্ধে।

উইঘুররা লড়ল বীরের মত। কিন্তু সংখ্যাধিক্যের কাছে পরাজিত হল তারা। ক্রমেই পিছনে সরে আসতে আসতে শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকা উইঘুররা প্রবেশ করলেন কোচো রাজত্বে। শুরু হল তাঁদের টিকে থাকার লড়াই।

১০০৬ সালে এলেন তুর্কী বীর ইউসুফ কাদির খান। পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হল মুসলিম সালতানাত “কারা খানিদ খানাত”। তবে এবার আরব আধিপত্যে নয়; তুর্কী আধিপত্য স্থাপিত হল। এই সালতানাত শাসন করে গেছেন সাতুক বুঘরা খানের মত তুর্কী-উইঘুর বংশোদ্ভূত সুলতানরা।

আঠারো শতকের শেষের দিকে কিং ডাইন্যাস্টি (Qing Dynasty) জুনগড় এবং তারিম উপত্যকার পূর্বাঞ্চল দখল করার মাধ্যমে স্বাধীন উইঘুর সাম্রাজ্যকে নিজেদের অধীনে নিয়ে নেয়। কিন্তু স্বাধীনচেতা উইঘুরদের স্বাধীনতার স্বপ্নকে তারা কখনো দমিয়ে রাখতে পারেনি।

১৯৩৩ সালে এক বিপ্লবের মাধ্যমে উইঘুর মুসলিমরা কাশগড় এবং এর আশেপাশের এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত করে পূর্ব তুর্কিস্তান নামক দেশের। স্বাধীন পতাকা আকাশে ওড়া শুরু করতেই তাঁদের এই ক্ষুদ্র অঞ্চলের উপর হামলে পড়ে চাইনিজ জেনারেল শেং শি চাই এর নেতৃত্বে চাইনিজ হানরা। ব্যাপক দমন পীড়ন চালানো হয় উইঘুরদের উপর। উইঘুররা আত্মগোপনে চলে যেতে বাধ্য হয়।

১৯৪০ সালে উইঘুর নেতা আব্দুল আজিজ মাখদুম, আব্দুল হাকিম মাখদুম প্রমুখ মিলে প্রতিষ্ঠা করেন তুর্কিস্তান ইসলামী পার্টি। গোপন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকেন তাঁরা। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৪৪ সালে তিয়েনশান পর্বতমালার ওপারে ঘুলজা এবং এর আশেপাশের অঞ্চলে আবারো বিপ্লবের মাধ্যমে তাঁরা প্রতিষ্ঠিত করেন পূর্ব তুর্কিস্তান। তিয়েনশানের পাহাড়ী দেয়াল প্রাকৃতিক ভাবেই সুরক্ষিত রাখছিল উইঘুর মুসলিমদের এই নতুন পূর্ব তুর্কিস্তানকে।

১৯৪৯ সালে চীনের গৃহযুদ্ধের সমাপ্তির পর কমিউনিস্ট চীন পূর্ব তুর্কিস্তানকে বৃহত্তর চীনের সাথে একত্রিত হওয়ার প্রস্তাব দেয়। উইঘুরদের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ও তাঁদের ইতিহাস চর্চার সুযোগ দেয়ার অঙ্গীকার করা হয়।

একদিকে কমিউনিস্ট রাশিয়া, (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) অন্যদিকে কমিউনিস্ট চীন। যেকোন সময় এই দুই শক্তির মাঝে যে কোন শক্তির দ্বারা আক্রমণের শিকার হতে পারে পূর্ব তুর্কিস্তান। আর উইঘুরদের সামনে সোভিয়েত রাশিয়ার চেচেন মুসলিমদের দুর্ভাগ্যজনক উদাহরণ ছিল। তথাপি আব্দুল হাকিম মাখদুম এবং তাঁর অনুসারীরা স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রয়োজনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। কিন্তু উইঘুরদের একটা বড় অংশই যুদ্ধের ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানায়। তারা শান্তিপূর্ণ জীবন চাইছিল। আর তাই এই দুই বৃহৎ পরাশক্তির মাঝে উইঘুররা চাইনিজদের বেছে নেয়।

আব্দুল হাকিম মাখদুম বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব পোষণ করায় গ্রেফতার হলেন। নতুন এই প্রদেশের নামকরণ করা হল জিনজিয়াং। উইঘুররা ভেবেছিল চাইনিজ সরকার তাদের করা অংগীকার পালন করবে। কিন্তু লড়াই ছেড়ে দিয়ে তাঁরা যে ভুল করেছিল, শীঘ্রই সেই ভুলের খেসারত দিতে হয় তাঁদের।

চাইনিজ সরকার উইঘুরদের সাথে করা অঙ্গীকার পালন করা দূরে থাক, তথাকথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পর এক জাতীয়তার ধোঁয়া তুলে উইঘুরদের উপর ব্যাপক দমন পীড়ন চালায়। হত্যা করা হয় হাজার হাজার উইঘুরকে। চায়নার অন্যান্য প্রদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ হান জনগোষ্ঠীর লোকদের নিয়ে এসে পুনর্বাসিত করা হয় উইঘুর এলাকায়। ফলে ধীরে ধীরে জনসংখ্যার দিক থেকেও উইঘুররা কোণঠাসা হয়ে পড়তে থাকে।

১৯৪০ সালের হিসাব অনুযায়ী যেখানে পুরো প্রদেশে হান ছিল মাত্র ৫%, সেখানে রাতারাতি হানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়ে যায় ৪৫%। স্বজন হারিয়ে, গুম-খুনের শিকার হয়ে দেশত্যাগে বাধ্য হয় অসংখ্য উইঘুর। কিন্তু তাঁদের পালানোর পথটাও সহজ ছিল না। বহির্বিশ্বের কাছে নিজেদের ক্লিন ইমেজ ধরে রাখার জন্য চায়না এই দেশত্যাগরত উইঘুরদের উপরও হামলা চালায়। তাঁদের বাঁধা দেয়া হয় দেশত্যাগে। যাঁরা পালাতে পেরেছিলেন, তাঁরা এক অর্থে বেঁচে যান। কারণ, রয়ে যাওয়া উইঘুরদের উপর এবার কমিউনিজম চাপিয়ে দেয়া শুরু করে চীন। তাঁদের ধর্মীয় শিক্ষা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উপর বিধিনিষেধ আরোপিত হয়। তাঁদের বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়। সর্বোপরি তাঁদের উইঘুর জাতিসত্বাবোধ মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। প্রতিবাদ করলেই হয় গুম-খুন, নতুবা উদ্বাস্তু হতে হয় তাঁদের। এভাবেই হাতিয়ার ছেড়ে দেয়ার, সংগ্রাম ছেড়ে দিয়ে, স্বাধীনতা রক্ষায় মৃত্যুবরণের ইচ্ছা পরিত্যাগ করে যে ভুল করেছিল; উইঘুররা তার মাশুল দিতে থাকে।

১৯৮০ সালে জেল থেকে ছাড়া পান আব্দুল হাকিম মাখদুম। ততোদিনে বৃদ্ধ হয়ে গেছেন তিনি। নতুন করে চাইনীজ নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করার শারীরিক শক্তি তাঁর আর অবশিষ্ট নেই। কিন্তু তবুও তিনি প্রচার করতে থাকেন তাঁর মত। স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখাতে থাকেন তাঁর হাতেগোনা কয়েকজন ছাত্রকে। তাদেরই একজন জিয়াউদ্দিন ইউসুফ। ১৯৮৮ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন উইঘুরদের আজাদী আন্দোলনের দল পূর্ব তুর্কিস্তান ইসলামীক পার্টি।

চমৎকার সাংগঠনিক ক্ষমতাসম্পন্ন এই তরুণ নেতার আওয়াজ খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়তে থাকে উইঘুরদের ঘরে ঘরে। উইঘুরদের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষায় আন্দোলন চালিয়ে যাবার লক্ষ্য ব্যক্ত করেন তিনি। তাঁর ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও শক্তিশালী সাংগঠনিক ক্ষমতা দেখে ১৯৯০ সালে চাইনিজ সরকার এক সাজানো দাংগা নাটকের মাধ্যমে তাঁকে হত্যা করে। তাঁর অনুসারীদের উপর শুরু হয় দমন-পীড়ন। অসংখ্য কর্মীকে পাঠানো হয় জেলে। অনেকেই অত্যাচার থেকে বাঁচতে, বিশ্বকে উইঘুরদের ব্যাপারে জানাতে এবং তাঁদের আন্দোলনকে বাইরে থেকে চালিয়ে নেবার জন্য দেশত্যাগ করেন।

চীনের সংশোধিত নীতিমালার ফলে উইঘুর মুসলিমদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল হয়েছে। কিন্তু এখনো তাঁদের স্বাভাবিক অধিকারটুকুও নিশ্চিত হয় নি। জিনজিয়াং-এ এখনো বাইরে থেকে এনে হানদের অবৈধ বসতি স্থাপন চলছে। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করা হলেই তাকে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ড আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদকারীকে প্রহসনমূলক বিচারের সম্মুখীন করা হচ্ছে।

আঠারো বছরের আগে কোন উইঘুর মুসলিম মসজিদে যেতে পারে না। সম্মিলিতভাবে কোরআন, হাদীস কিংবা অন্য কোন ইসলামী জ্ঞান চর্চা করা নিষিদ্ধ। উইঘুর মুসলমানরা নিজেদের আচার-অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত বাঁধার মুখে পড়ছে। পবিত্র রমযান মাসে সরকারি কর্মচারীরা রোযা রাখতে পারবে না, কেউ যদি রোজা রাখে, তাকে রোজা ভাঙতে বাধ্য করা হয়। কলেজ ছাত্রদের অবশ্যই সাপ্তাহিক রাজনৈতিক শিক্ষাক্লাসে যোগ দিতে হবে এবং সশস্ত্র পুলিশ কর্মকর্তারা কতৃপক্ষের অনুমোদনবিহীন মাদরাসাগুলোতে যখন ইচ্ছা হানা দিতে পারবে।

সবচেয়ে বেশি উসকানিমূলক পদক্ষেপ হচ্ছে, নারীদের হিজাব ব্যবহার করা ও পুরুষদের দাড়ি রাখার বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান। যেসব ট্যাক্সিচালক বোরকা পরা নারীদের গাড়িতে নেবে, তাদের মোটা অংকের জরিমানা করা, হিজাব সরাতে অনিচ্ছুক নারীদের চিকিৎসা সেবা দিতে ডাক্তারদের নিষেধ করা হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। ধর্মীয় স্থাপনাগুলো সার্বক্ষণিক থাকে তাদের গোয়েন্দা নজরদারিতে। নামাজ পড়ার কারণে চাকরি চলে গেছে, এরকম ভুরিভুরি নজির আছে ঝিনঝিয়াংয়ের উইঘুর জনপদে। চাকরির ক্ষেত্রেও উইঘুর মুসলমানরা চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। যা সাম্প্রতিক সময়ে পরিচালিত একটি জরিপ থেকে বোঝা যায়।

ধর্মীয় ক্ষেত্রে উইঘুর মুসলিমদের প্রতি চীন সরকারের নীতির কঠোর সমালোচনা করে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ২০০৯ সালের দাঙ্গার পর চীনা সরকারের সমালোচনা করে শান্তিপূর্ণভাবে মতামত প্রকাশের দায়ে চীন সরকার গোপনে বেশ কয়েকজন উইঘুর মুসলিম বুদ্ধিজীবীর বিচার করেছে। চীন সরকারের কঠোর মিডিয়া নীতির কারণে এসব সংবাদ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আসতে পারে না। উইঘুর মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের গ্রেফতার ও হয়রানি করার মাধ্যমে তাঁদের সর্বদা মানসিক চাপে রাখা হচ্ছে। যেমনটা হয়েছে ২০১৪ সালে বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির খ্যাতনামা অধ্যাপক ইলহাম তোহতিকে কোন অভিযোগ ছাড়াই গ্রেফতারের কারণে।

বিগত ১৭ বছরে অন্তত ৮ টি বড় রকমের হামলার খবর প্রকাশিত হয়েছে যেখানে হান বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর দ্বারা হামলার শিকার হয়েছে উইঘুর মুসলিমরা। আশ্চর্জনকভাবে এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে বিদেশে অবস্থানরত নগণ্য সংখ্যার উইঘুর মুসলিম এক্টিভিস্টদের। আর এভাবেই প্রতিনিয়ত নিপীড়নের মাধ্যমে দাবিয়ে রাখা হচ্ছে উইঘুরদের আজাদী আন্দোলনের দাবি। পশ্চিমা নামকরা মিডিয়াগুলোও এক্ষেত্রে একপক্ষীয় অসাংবাদিকসুলভ আচরণ করছে। তাদের কাছে পূর্ব তিমুরের বিচ্ছিন্নতাকামীরা হয়ে যায় স্বাধীনতা যোদ্ধা। আর পূর্ব তুর্কিস্তানের বিচ্ছিন্নতাকামীরা হয়ে যায় সন্ত্রাসী।

এমন দিনের সমাপ্তি ঘটানোর জন্য ইউসুফ কাদির খান কিংবা সাতুক বুঘরা খানেরা আর ফিরে আসবেন না। মুসলমানদের সম্মিলিত, ঐক্যবদ্ধ শক্তি এবং মুসলিম সংগঠনগুলোর দৃঢ় পদক্ষেপ ছাড়া উইঘুরদের এ দুরবস্থা দূর করা অসম্ভব। চীনের অর্থনীতির একটা বড় বাজার হল মুসলিম দেশগুলো। চীনের উপর এই দেশসমূহের সম্মিলিত চাপপ্রয়োগ পারে উইঘুরদের আজাদী আন্দোলনের পথকে আরো সুগম করতে। সেদিন হয়ত নতুন কোন জিয়াউদ্দিন ইউসুফ এসে ওড়াবেন পূর্ব তুর্কিস্তানের চাঁদ তারা খচিত আকাশী নীল পতাকা।

প্রজন্ম পাবলিকেশন থেকে উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে শীগ্রই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে “উইঘুরের কান্না” গ্রন্থটি।

Leave a Reply