Your Cart
কীভাবে বুঝবেন যে আপনি উদ্যোক্তা হবার জন্য প্রস্তুত?

কীভাবে বুঝবেন যে আপনি উদ্যোক্তা হবার জন্য প্রস্তুত?

মাঝেমধ্যে উদ্যোক্তাদের ওপর ব্যর্থতা যেন জেঁকে বসে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই একের পর এক ব্যর্থতার মুখ দেখে। এটাই হচ্ছে এই খেলার নিয়ম। কঠিন এক নিয়ম। তা সত্ত্বেও এসব কিছুই আপনাকে আপনার পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না যদি আপনি সফলতার ব্যাপারে অদম্য অনুসন্ধান চালিয়ে যান। এ বিষয়ে আলোচনার এই মুহূর্তে চলুন প্রস্তুতির ব্যাপারে একটা চেকলিস্ট নিয়ে আলোচনা করা যাক। নিচে আমি এক সেট প্রশ্ন দিচ্ছি। এগুলো আপনাকে সাহায্য করবে প্রস্তুত হওয়ার বিষয়ে। যদি আপনি ইতিমধ্যেই আমার বর্ণিত চরিত্রগুলোর মত (বই তিনটি সত্য ঘটনা সম্পর্কে বলা আছে, বেশ বড় হওয়ায় এখানে দেওয়া হয়নি) না হয়ে থাকেন, তাহলে ধরে নিন আপনি কোম্পানি শুরু করার জন্য প্রস্তুত।

• আমার বস যদি আমার ব্যবসায়িক আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি জেনে ফেলে এবং আমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দেয় তাহলে আমি কি নিজেকে নিঃস্ব মনে করবো?
• আমি কি আমার ওপর নির্ভরশীল সবার সাথে আমার উদ্যোগের সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করেছি?
• আমি কি আমার বাড়িগাড়ি, ক্লাব মেম্বারশিপ এবং অফিশিয়াল পজিশন ছাড়তে প্রস্তুত?
• কোম্পানি সমৃদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি কি নতুন অবস্থায় একেবারে কম বেতন নিতে রাজি?
• আমি কি কোনোরকমে একটা হোটেলে বসবাস করতে এবং প্রাইভেট ট্যাক্সির বদলে ট্রেনে চড়ার মত ত্যাগ স্বীকার করতে সক্ষম?
• কোম্পানির বাকি সবার আয় আমার চেয়ে বেশি হলেও সব ঠিকঠাক থাকবে তো?
• আমি কি কোম্পানিকে একটা সমৃদ্ধ অবস্থানে দাঁড় করানোর জন্য কয়েক বছরব্যাপী সপ্তাহে সত্তর ঘন্টা কাজ করতে পারবো?
• আমি কি একটি জরাজীর্ণ অফিসে, আলোবিহীন অবস্থায় গুটিকয়েক সহকর্মীদের সাথে কাজ করতে সক্ষম?
• আমি কি নিজের ফোনকল, মেমো এসব নিজেই করার মত আত্মসম্মান অর্জন করতে পারবো?
• আমি কি নিজের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে সেটা পূরণ হওয়ার আগ পর্যন্ত দুর্বার গতিতে কাজ চালিয়ে যেতে পারবো?
• আমি কি প্রয়োজনে তাদের কাছে যেতে লজ্জাবোধ করবো যারা কিনা পূর্বে আমাকে কোনো বিজনেস অফার করেছিল?

আমি যখন মাইন্ডট্রি শুরু করেছিলাম, তখন রুমভর্তি বিশ্লেষকরা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেনো আমি মাইন্ডট্রি শুরু করলাম? এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার মত কোনো প্রস্তুতি আমার তখন ছিল না। কিন্তু আমি তাদেরকে যথাসাধ্য উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করলাম। আমি হয়তো তাদেরকে বলতে পারতাম যে বছরের পর বছর জুড়ে পাওয়া অভিজ্ঞতাই আমাকে মাইন্ডট্রি শুরু করতে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এই জবাবটি হয়তো তাদের পছন্দ হতো। কিন্তু আমি বললাম অন্য কথা। নিজের ভেতর থেকে সাহস নিয়ে কিছু কথা বলে ফেললাম সেদিন। তাদেরকে বললাম, একটা কোম্পানি শুরু করার বিষয়টি পেটে একটি বাচ্চা ধারণ করার মতই। আপনারা প্রত্যেক মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন বাচ্চা ধারণ করতে গিয়ে তারা কতটা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, কতটা কষ্ট পেয়েছে। নিশ্চয়ই জবাবটা পেয়ে যাবেন। পুরো ব্যাপারটাই আসলে কষ্ট এবং ত্যাগের বিষয়। তা সত্ত্বেও, যখন বাচ্চা জন্ম নেয়, একজন মা সকল কষ্ট ভুলে যান তার সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে। কোনো ব্যথা, কোনো অস্বস্তি, জীবনের কোনো পরিবর্তনই তার মা হওয়ার আনন্দকে ম্লান করতে পারে না। তেমনিভাবে নিজের ব্যবসা শুরু করাটা হচ্ছে মাতৃত্বের স্বাদের মতন। আপনি বুঝতে পারবেন কখন সময় এসেছে—এর কিছু চিহ্ন আপনি দেখতে পারবেন—তারপর সব করতে পাবেন। অতঃপর সব পারবেন আপনার আকাঙ্ক্ষিত বিষয়টিকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরার জন্য।

সর্বশেষে আমি আরেকটা বিষয় বলতে চাই, অনেক উদ্যোক্তারা ভুল কারণে তাদের উদ্যোগের সূচনা করে।

ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে ভ্রান্ত কারণসমূহ

একবার আমি ছাব্বিশ বছর বয়স্ক একজন ইঞ্জিনিয়ারের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম। ছেলেটা কী করবে না করবে সেটা না জেনেই উদ্যোক্তা হতে চাইছিল। সে কোন ধরণের সেবা দেবে? কী সে বিক্রি করবে? কীভাবে সে টাকা আয় করবে এবং কেনো অন্যরা তার কাস্টমার হবে? এসব বিষয়ের কোনোটা নিয়েই সে ভাবেনি। আমাকে সে যা বলেছিল তার সারমর্ম এরূপ— ‘ওহ, কিন্তু এখনই যদি সঠিক সময় না হয়, তাহলে কখন? আমার সময় তো ফুরিয়ে যাচ্ছে!’

ছেলেটার পাঁচ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতায় সে কেবল সফটওয়্যারের কোড লিখেছে। আমি তাকে বললাম, প্রেম করো, একটা গার্লফ্রেন্ড বানাও, বিয়ে করো, পরিবার গঠন করো। আরো কিছুদিন কাজ করে নানা বিষয় সম্পর্ক শেখো। কয়েকটা চাকরি বদলাও। অভিজ্ঞতা নাও। চেষ্টা করো মার্কেটিং এবং ফিন্যান্স সম্পর্কিত বিষয়াবলী সম্পর্কে ভালো ধারণা নিতে। তারপর কোম্পানি শুরু করতে আসো। একমুহূর্ত সে হতাশ হয়ে রইলো। তারপর ফের সে কতটা শক্ত-সামর্থ্য সেটা বোঝানোর জন্য আমাকে তার আইডিয়া পুনরায় শেয়ার করার পর বললো, ‘কিন্তু সময় চলে যাচ্ছে।’ আপনার সময় চলে যাচ্ছে বা এখনই সঠিক সময়, এমন ভাবনা কখনোই একটা কোম্পানি খোলার জন্য যথেষ্ট নয়।

সত্যিকারার্থে, এখনই সময়, যদি আপনার দীর্ঘমেয়াদী নির্দিষ্ট লক্ষ্য, স্বপ্ন এবং কাজ করার মত মূল্যবোধ থাকে। এখনই সময়, যদি আপনি একটা দল গঠন করতে সমর্থ্য হন যারা আপনার মত একই ব্যক্তিগত মূল্যবোধ শেয়ার করে। এখনই আপনার সময়, যদি আপনি দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকার জন্য একাধিক পণ্যের সমন্বয় করতে পারেন কেবল আপনার আবিষ্কৃত একটি পণ্যের ওপর নির্ভর না করে। এখনই আপনার সময়, যদি আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন আপনার কাজে। এখনই আপনার সময়, যদি আপনি মনে করেন যতটা সময় ও শ্রম দরকার একটা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে সেটা আপনি দিতে পারবেন। এখনই নিশ্চিত আপনার সময়, যদি আপনার পরিবার আপনাকে কাজটি করতে সায় দেয় এবং আগামী দশ বছরের জন্য অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকিগুলো নিতে প্রস্তুত থাকে। একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে প্রায়ই এতটুকু সময় লাগেই।

মাঝেমধ্যে আমি কিছু হিতৈষী ব্যক্তির দেখা পাই। তারা বলে, ‘আমি এটা টাকার জন্য নয়, দেশের জন্য করতে চাই।’

আপনার যদি টাকার দরকার না হয়, তাহলে অনুগ্রহ করে কোন কোম্পানি শুরু করতে যাবেন না। একেবারে সহজ কথা এটা। দেশের সেবার করার অনেক উপায় রয়েছে। সেজন্য যে কোম্পানি খুলতে হবে এমন কোনো কথা নেই। অনেক টাকা আয় করলেই যে নিজের মাঝে স্বার্থপরতা চলে আসবে এমন কোনো কথা নেই। বরং এর দ্বারাও দেশের সেবা করা আরো বেশি সম্ভব। কিন্তু টাকা আয় করাটা পছন্দ না হলে, আপনি টাকা আয়ের বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে উত্তেজিত হবেন। আপনি যদি টাকা পছন্দ না করে থাকেন, তাহলে সম্পদের ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ করার যন্ত্রণা বুঝতে ব্যর্থ হবেন। এটা অনেকটা আপনার পেয়িং কাস্টমার এবং আপনার কাজের প্রশংসা করা ব্যক্তির মধ্যে তফাৎ ধরতে না পারার সমান। এমনকি আপনি ব্যবস্থাপণার ব্যয়, আপনার ব্যবসার অংশীদারদের মূল্য বুঝতেও ব্যর্থ হবেন।

লাভজনকতা তত্ত্বটি যেকোন ব্যবসার সাথে সামাজিকভাবেই যুক্ত। মোটাদাগে কোনো কোম্পানি যখন ব্যর্থ হয়, অর্থনীতি এবং জীবনব্যবস্থাও একইসাথে ধ্বংস হয়। সুতরাং, আপনি যদি টাকা ভালো না বাসেন তাহলে ঠিক যেই অবস্থানে আপনি আছেন সেখানেই থাকুন। আগের মতই জাতিসেবায় অবদান রাখুন।

লোকেদের নিজস্ব কোম্পানি খোলার বিষয়টিকে অতিরোমাঞ্চিত করার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই। আমাদের প্রচুর পরিমাণে দক্ষ উদ্যোক্তা দরকার। কিন্তু একই হারে আমাদের দক্ষ লোক দরকার, যারা কিনা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চালিত করবে। তাদেরকে আমি সনি করপোরেশনের কাঠের রাইস কুকার থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আসার বিষয়ে ভাবতে বলবো। এই বইটিতে কোম্পানি খোলার বিষয়ে সবাইকে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি আমি আরেকটা বিষয় সবাইকে স্পষ্ট করে দিতে চাই যে কোম্পানি শুরু করাটা কোনো ছেলেখেলা নয়। যখন আপনি একটা কোম্পানি খুলতে যাবেন, আপনাকে নিশ্চয়ই আপনার বিনিয়োগকারীদের দায়ভার নিতে হবে। আরো দায়বদ্ধতা নিতে হবে ঐসব লোকদের, যারা কিনা আপনার পণ্য ও সেবা ব্যবহার করবে। এছাড়াও আপনাকে সেসব মানুষের দায়ভার নিতে হবে, যারা কিনা আপনার স্বপ্নের বাগান গড়ার বিষয়টিকে সফল করার জন্য আপনার সাথে কাজ করবে, যেটির সূচনা আপনি নিজে করলেন নিজ হাতে ছোট্ট একটা চারাগাছ লাগানোর মধ্য দিয়ে।

এই লোকগুলোর ওপর দিয়ে আপনি কখনোই নিজের ব্যক্তিগত এবং অস্থায়ী আকাঙ্ক্ষাকে চাপিয়ে দিতে পারেন না। এতকিছু বলার পর এবং বোঝানোর পর উদ্যোক্তাদের মনে একটাই প্রশ্ন জাগতে পারে, ‘আমি নিজেও কি আমার উদ্যোগেরই অংশ?’

সফল উদ্যোক্তা বই থেকে।

একজন উদ্যোক্তার উচিত বাক্সের বাইরে চিন্তা করা। আপনি যদি উদ্যোক্তা হোন কিংবা উদ্যোক্তা হওয়ার প্ল্যান করেন তবে মাথায় রাখবেন আপনাকে প্রচুর পড়তে হবে। বিল গেইটসের মতো না হলেও মাসে ২-৩টি বই পড়ুন। বই আপনাকে বাক্সের বাইরে চিন্তা করা শেখাবে।

প্রজন্ম পাবলিকেশন উদ্যোক্তাদের জন্য প্রকাশ করেছে অনেকগুলো বই। সেগুলো থেকে বাছাইকৃত ১০টি বই নিয়ে করে হয়েছে উদ্যোক্তা প্যাকেজ। যে বইগুলো প্রতিটি উদ্যোক্তা, ব্যাবসায়ী, কিংবা উদ্যোগ নিতে চাওয়া ব্যাক্তিদের টেবিলে রাখা দরকারি। 

উদ্যোক্তাদের জন্য অতীব জরুরী ১০ বই